ভিটামিন ডি রৌদ্রজ্জ্বল ভিটামিন নামেও পরিচিত। এটিই একমাত্র ভিটামিন যা আমাদের শরীর সূর্যের রশ্মি থেকে তৈরি করে। ভিটামিন-ডি কে যদিও চর্বি দ্রবণীয় ভিটামিন বলা হয় কিন্তু বাস্তবে এটি একটি হরমোন। আমাদের প্রাণবন্ত স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন-ডি খুবই জরুরি কারণ এটি আমাদের শরীরের প্রায় সমস্ত ক্রিয়াকলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ভিটামিন আমাদের হাঁড়ের স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন-ডি আমাদের শরীরের ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখে, আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, পেশী গুলোর সঠিক কার্যকারিতায় সহায়তা করে, আমাদের হৃদযন্ত্র এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে সাপোর্ট করে।

 

বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা যায়, ভিটামিন ডি এর ঘাটতি আবশ্যই একটি বড় চিন্তার বিষয় –

 

  • জন্মের জটিলতা – প্রি-একল্যাম্পসিয়া, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এবং অকালে জন্মের ঝুঁকি বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত

 

আমরা কীভাবে জানব যে আমাদের ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি রয়েছে?

 

যে কোনো বড় রোগের সম্ভাবনা প্রতিরোধ করার জন্য প্রত্যেকেরই নিয়মিত তাদের ভিটামিন ডি এর মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত। কিছু লক্ষণ প্রতিনিয়ত খেয়ালে রাখা উচিত, যেমন- পেশী দুর্বলতা, জয়েন্ট এবং হাড়ে ব্যথা, ক্লান্তি, মন খারাপ থাকা।

 

ভিটামিন ডি ৩ টি উৎস থেকে পাওয়া যায়

 

সূর্য- প্রতিদিনের ভিটামিন ডি এর প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে দিনের মাঝামাঝি সময়ে খালি গায়ে সূর্যের আলোর নিচে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের এক্সপোজারই যথেষ্ট হতে পারে। তবে বেশ কিছু কারণ রয়েছে যা আমাদের ভিটামিন ডি গ্রহন করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করেতে পারে, যেমন পৃথিবীর অবস্থান, ত্বকের এক্সপোজার, ত্বকের রঙ (দক্ষিণ এশীয়দের গাঢ় ত্বকের কারণে ঘাটতির সম্ভাবনা বেশি) এবং বয়স।  যদিও বাংলাদেশ একটি ক্রান্তীয় দেশ তবুও ভিটামিন ডি এর অভাব বিশেষ করে শিশু ও মহিলা জনসংখ্যার মধ্যে প্রকট।

 

খাদ্য- ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার রয়েছে  খুব বেশি পাওয়া যায় না এবং বেশিরভাগই প্রতিদিনকার প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। বেশ কিছু খাবারে এই ভিটামিন পাওয়া যায় যেমন-তৈলাক্ত মাছ-পাঙ্গাশ, ইলিশ, স্যামন, কার্প, ট্রাউট, লাল মাংস, ডিমের কুসুম এবং ভিটামিন ডি-দুধ, ব্রেকফাস্ট সিরিয়ালস, জুস।

 

সম্পূরক- আমাদের যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের এক্সপোজার থাকে তবে সম্পূরকের প্রয়োজন নাও হতে পারে তবে যেহেতু বাংলাদেশে মহিলা ও শিশুদের মধ্যে ভিটামিন ডি এর অভাব রয়েছে, তাই পরিপূরক গুলোর প্রয়োজন হয়। ২ ধরনের সম্পূরক D2 (ergocalciferol) এবং D3 (cholecalciferol) আছে। D3 প্রয়োজনীয়তা পূরণে অধিক কার্যকর এবং D2 নিরামিষাশীদের জন্য উপযুক্ত।

 

যেহেতু এটি একটি চর্বিযুক্ত দ্রবণীয় ভিটামিন, তাই স্বাস্থ্যকর চর্বির সাথে এই সম্পুরকগুলো গ্রহণ করা হলে এটি ভালোভাবে শরীরে কাজ করে। খাবারের সাথে পরিপূরক গ্রহণ করা উচিত। যে সকল ব্যক্তিরা দ্রুত মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্যও সম্পূরক গ্রহণ করা দরকার কারণ তারা ভিটামিন ডি এর অভাবের জন্য এসব সমস্যায় আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকেন।

 

আমাদের কতটুকু ভিটামিন ডি প্রয়োজন?

 

১ থেকে ৭০ বছর বয়সী বেশিরভাগ লোকের প্রতিদিন প্রায় ১০-১৫ মাইক্রোগ্রাম (৪০০-৬০০ আইইউ) ভিটামিন ডি প্রয়োজন। এই পরিমাণটিকে যথেষ্ট এবং নিরাপদ বলে মনে করা হয়, তবে যাদের অভাব রয়েছে তাদের জন্য প্রয়োজনীয়তার মাত্রা বেশি হতে পারে। জন্ম থেকে ১ বছর পর্যন্ত শিশুদের প্রতিদিন ৮.৫-১০ মাইক্রোগ্রাম (৩৪০-৪০০ আইইউ) এর মধ্যে ভিটামিন ডি প্রয়োজন।

 শরীরে খারাপ প্রভাব যেমন টক্সিসিটি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই তবে দীর্ঘ সময় ধরে যদি পরিপূরকের উচ্চ ডোজ গ্রহণ করা হয় তবে এটি ঘটতে পারে। অনেক সময় এটি ক্যালসিয়াম বিল্ডআপের কারণ হতে পারে যা হাড়কে দুর্বল করতে পারে।

 

তাজরিন মল্লিক (আরডি)
BSc Dietetics and Nutrition (UK)
Grid (National Kidney Foundation, USA)
Clinical Dietitian, National Kidney Foundation and Research Institute
Visiting Consultant, Praava Health

Recommended Posts

No comment yet, add your voice below!


Add a Comment