দাঁতের চিকিৎসায় ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে কার্যকর একটি পদ্ধতি রুট ক্যানাল। অনেক রুগী রুট ক্যানালে অনীহা প্রকাশ করেন, দাঁতে ভয়ংকর ব্যথা লাগবে এই ভয় পান। কিন্তু সঠিকভাবে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের হাতে চিকিৎসা করালে, রুট ক্যানাল তেমন যন্ত্রণাদায়ক বা জটিল চিকিৎসা নয়।
অনেকে প্রশ্ন করেন, রুট ক্যানাল চিকিৎসা কী বা রুট ক্যানাল করা কেন প্রয়োজন? কীভাবে জানবো যে আমার রুট ক্যানালের প্রয়োজন আছে কি না এবং এটি করার সময় করণীয় কি? তাই আপনাদের জন্য একজন ডেন্টিস্টের দৃষ্টিকোণ থেকে রুট ক্যানেলের প্রতিটি ধাপ উল্লেখ করা হল:
রুট ক্যানাল চিকিৎসা কি?
রুট ক্যানাল চিকিৎসা দাঁতের জন্য ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি, যা ক্ষয় হওয়া দাঁত, দাঁতের স্নায়ু এবং আক্রান্ত মাড়ি সারিয়ে দাঁতকে না ফেলে সংরক্ষণ করার পদ্ধতি। নানা কারণে দাঁতে গর্ত বা ক্ষয় দেখা দেয়। যদি সেই গর্ত দাঁতের অ্যানামেল, ডেন্টিনকে ভেদ করে দাঁতের মজ্জাকে আক্রান্ত করে, দাঁতে প্রদাহ সৃষ্টি করে তখন দাঁতের রুটের ক্যানালের যে চিকিৎসা দেওয়া হয়, সেটি সাধারণত রুট ক্যানাল নামে পরিচিত। রুট ক্যানাল চিকিৎসা বা আরসিটি পদ্ধতিতে দাঁতের সংক্রমিত নার্ভ বা রুট ক্যানাল পরিষ্কার, দাঁত না ফেলে দাঁতকে ব্যথামুক্ত ও রুট ফিলিং করা হয়।
সময়মতো দাঁতের চিকিৎসা না করলে দাঁতের ভিতরের রক্তনালী এবং স্নায়ুগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তখন পুঁজ, হয়, ফুলে যায়, ব্যথা হয়। তাই রুগীর দাঁতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ডেন্টিস্টরা সময়মতো রুট ক্যানাল করার পরামর্শ দেন। রুট ক্যানাল চিকিৎসায় দাঁতকে এন্ডোডন্টিক চিকিৎসার মাধ্যমে রক্ষা করা হয়।
কেন রুট ক্যানাল চিকিৎসা প্রয়োজন?
আপনি প্রায়ই দাঁত ব্যথা নিয়ে ডেন্টিস্টের কাছে আসেন, মাঝে মাঝে প্রচন্ড ব্যথা ফোলা নিয়ে আসেন, তখন ডেন্টিস্ট আপনাকে পরীক্ষা করে এক্স-রে দেখে রুট ক্যানাল করার পরামর্শ দেন। রুট ক্যানাল চিকিৎসার উদ্দেশ্য হলো দাঁতের ভিতরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এবং ভবিষ্যতে সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো এবং আক্রান্ত দাঁতকে রক্ষা করা। এটি সময়সাপেক্ষ একটি চিকিৎসা পদ্ধতি হলেও এর প্রতিটি পর্যায়ে পুনঃসংক্রমণের ঝুঁকি কমিয়ে দাঁতকে ফেলে না দিয়ে সংরক্ষণ করার যথাসম্ভব চেষ্টা করা হয়।
রুট ক্যানাল চিকিৎসা কী এবং এর প্রয়োজনীয়তা ও খুঁটিনাটি সম্পর্কে বুঝতে হলে প্রথমে আমাদের দাঁতের গঠনের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে বুঝতে হবে।
# এনামেল- খালি চোখে দেখা যায় এটি দুধ সাদা রঙের দাঁতের শক্ত স্তর, যা দাঁতের উপরের অংশকে ঢেকে রাখে। এনামেল শক্ত ও মোটা হয় এবং ডেন্টিন ও পাল্পকে বাইরের পরিবেশ থেকে রক্ষা করে।
# ডেন্টিন- এটি এনামেল-এর নিচে হলুদাভ স্তর এবং দাঁতের বেশিরভাগ গঠন ডেন্টিনই তৈরি করে। ডেন্টিন স্তরে দাঁতের ক্ষয় পৌঁছালে দাঁত সংবেদনশীল (সেন্সিটিভিট) হয়।
# পাল্প- এটি দাঁতের মাঝখান বা ভিতরে লাল রঙের অংশ, যা স্নায়ু ও রক্ত সরবরাহ করে দাঁতকে জীবিত রাখে। পাল্পকে দাঁতের হৃদয় বলা হয়। রুট ক্যানাল মূলত দাঁতের রুটের ভিতরের একটি টানেলের মতো, যা পাল্পের মাধ্যমে প্রসারিত হয়। পাল্প স্তরে দাঁতের ক্ষয় পৌঁছালে দাঁতে প্রদাহ শুরু হয়।
ক্ষয় হয়ে যাওয়া বা ভাঙ্গা দাঁত চিকিৎসা করানো না হলে রুট ক্যানালে প্রবেশের মাধ্যমে নার্ভে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ এতটাই তীব্র হয় যে, মাড়ি ফুলে গিয়ে ফোড়ার মতো হতে পারে। সেই ইনফেকশন রুটের শেষ মাথায় এপেক্স এরিয়াতে হয় এবং দাঁতকে টোকা (পারকার্শন) দিলে দাঁতে ব্যথা পাওয়া যায়। মূলত দাঁতের ক্ষয় থেকে সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়া দাঁতের গভীরে চলে গেলে রুট ক্যানালের নার্ভ ও রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হয়, দাঁতের মজ্জা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে রুট ক্যানাল চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। দাঁতের পাল্প ও রুট ক্যানাল যদি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে দাঁতের চিকিৎসায় দুটি বিকল্প থাকে-
# দাঁতটি তুলে ফেলা
# দাঁতে রুট ক্যানাল চিকিৎসা করা।
দাঁতের চিকিৎসা না করালে কী হবে?
অনেকেই তীব্র ব্যথা এবং অস্বস্তিবোধের জন্য দাঁতের চিকিৎসা করাতে অনীহা প্রকাশ করেন। চিকিৎসা ছাড়াই দাঁতের ভিতরের রক্তনালী এবং নার্ভগুলো মারাত্মকভাবে সংক্রমিত হয়, যার ফলে পুঁজ হতে পারে, ফুলে যেতে পারে। সাধারণত রুট ক্যানালের শেষ প্রান্তে পুঁজ জমে ইনফেকশন সৃষ্টি করে দাঁতে প্রদাহ হয়। ফুলে যাওয়া গুরুতর হলে মুখ, চোখ বা ঘাড়ের চারপাশে ফোলাভাব সৃষ্টি হয়। এক দাঁত থেকে ব্যথা অন্য দাঁতে প্রবাহিত হতে পারে। জমে থাকা পুঁজ থেকে সিস্ট, টিউমার থেকে ক্যান্সারও হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আপনাকে সরাসরি হাসপাতালে যেতে হতে পারে। দাঁতের চিকিৎসা না করলে দাঁতের মাড়ির চারপাশের হাড়ও ক্ষয় হতে পারে।
রুট ক্যানাল চিকিৎসার সাধারণ লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো কী কী?
# সংক্রমিত দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা পুঁজ বের হওয়া।
# নির্দিষ্ট দাঁতে তীব্র ব্যথা।
# দাঁত দিয়ে খাবার চিবাতে কষ্ট হও।
# গরম-ঠান্ডা, টক মিষ্টি খাবার ও পানীয় খেলে দাঁতে শিরশির লাগা।
# খাবার খাওয়া বাদেও দাঁতে তীব্র ব্যথা হওয়া।
# ব্যথায় সারা রাত ঘুমাতে না পারা।
রুট ক্যানাল চিকিৎসা প্রতিরোধে করণীয়?
# দিনে ২ বার দাঁত ব্রাশ করা এবং নিয়মিত ফ্লস করা।
# প্রতি ৬ মাস অন্তর ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে নিয়মিত চেকআপ এবং দাঁত পরিষ্কার করা। নিয়মিত যত্ন নিলে বড় ক্ষতির ঝুঁকি কমায়।
# যদি ডেন্টিস্ট মনে করেন যে দাঁতে ক্ষয় আছে ও ফিলিং করা প্রয়োজন, তাহলে দেরি না করে সেটি করে ফেলুন। কারণ দেরি করলে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ার ও নার্ভকে সংক্রমিত করার ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং ফলস্বরূপ রুট ক্যানাল চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
রুট ক্যানাল করানোর খরচের কথা চিন্তা করে হলেও দাঁতের যত্ন নিয়ে এর স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখা উচিৎ। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা, নিয়মিত ফ্লস করা এবং নিয়মিত দাঁত পরিষ্কারের জন্য প্রতি ৬ মাস অন্তর ডেন্টিস্টের কাছে গেলে, রুট ক্যানাল চিকিৎসার চেয়ে খরচ অনেক কম হবে।
রুট ক্যানাল চিকিৎসার সময় কি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া যাবে?
অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন কোন সংক্রমিত নার্ভকে সারিয়ে তোলার বিকল্প হতে পারে না, কারণ দাঁতটি তার নিজস্ব ইকোসিস্টেমের মধ্যে রয়েছে এবং তাই আমরা যেসব অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করি সেগুলো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত দাঁতের রুট ক্যানেল ও পাল্পে পৌঁছাতে পারে না। তবে যদি মনে হয় সংক্রমিত দাঁতের পাশে ফুলে গিয়েছে বা যদি জ্বর অনুভূত হয় সেক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক সাহায্য করতে পারে। কিন্তু যদি এমতাবস্থায় শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা দেখা দেয় বা মাড়ি বেশি ফুলে যায় ও ব্যথা বেশি হয়, সেক্ষেত্রে অবিলম্বে ডেন্টিস্ট বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
রুট ক্যানেল চিকিৎসায় প্রাথমিকভাবে দাঁতের ভিতর থেকে ব্যাকটেরিয়া অপসারণ করা হয়, যা রুট ক্যানেল চিকিৎসার সময় সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করার আরেকটি কারন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতমানের পরিস্কার পরিচ্ছন্ন জীবাণুমুক্ত ডেন্টাল রুম আপনাকে এন্টিবায়োটিকমুক্ত রুট ক্যানাল চিকিৎসা দিতে পারে।
রুট ক্যানাল চিকিৎসার ধাপ?
৩টি ধাপে দাঁতের রুট ক্যানাল চিকিৎসা করা হয়। এটি সময়সাপেক্ষ একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, যার প্রক্রিয়াও সুদীর্ঘ হতে পারে। তবে পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে ৩ ধাপে এটি করা হয় এবং এর ফলে রুগীরাও সর্বোত্তম ক্লিনিকাল ফলাফল পান। ধাপগুলো হলো;
প্রথম ধাপ- এক্সটির্পেশন: লোকাল এনেস্থেসিয়া দিয়ে রাবার ড্যাম ও ক্ল্যাম্প স্থাপন করা হয়। হ্যান্ডপিস ও বারের মাধ্যমে দাঁত ফুটো করে দাঁতের রুটের প্রতিটি ক্যানালের মুখ বের করা হয়। ক্যানালের সাইজ এপেক্স লোকেটর দিয়ে মেপে সেই সাইজের রিমার, ফাইল, ব্রোচ ব্যবহার করে দাঁতের নার্ভ অপসারণ, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং দাঁত মেডিকেট করার মাধ্যমে রুট ক্যানেল পরিষ্কার করা হয়। দাঁতের অবস্থার উপর ভিত্তি করে এই প্রক্রিয়ায় ২০-৪৫ মিনিট সময় লাগতে পারে।
দ্বিতীয় ধাপ- ইন্সট্রুমেন্টেশন: এখানে রাবার ড্যাম এবং ক্ল্যাম্প স্থাপন করা হয়। দাঁত যেন ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রিত ও ব্যথামুক্ত হয় তা নিশ্চিত করতে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট, ইডিটিএ, নরমাল স্যালাইন দিয়ে রুট ক্যানেলে যথাযথভাবে পরিষ্কার করা হয়। দাঁতের অবস্থার উপর ভিত্তি করে এই প্রক্রিয়ায় ৩০-৬০ মিনিট সময় লাগতে পারে।
তৃতীয় ধাপ- অবচ্যুরেশন: এখানে রাবার ড্যাম ও ক্ল্যাম্প স্থাপন করা হয়। দাঁত সম্পূর্ণ ব্যথামুক্ত হলে অবচ্যুরেশন করা হয়। রুট ক্যানেলগুলোকে সম্পূর্ন শুকিয়ে ‘গাটা পার্চা’ নামক কৃত্তিম পাল্প ক্যানালের সাইজ অনুযায়ী ব্যবহার করে বিশেষ উপায়ে ভরাট করে চিকিৎসা সম্পূর্ণ করা হয়। দাঁতের অবস্থার উপর ভিত্তি করে এই প্রক্রিয়ায় ৩০-৬০ মিনিট সময় লাগতে পারে।
রুট ক্যানাল চিকিৎসার ৩টি ধাপ নিয়ে বিস্তারিত নিম্নে দেওয়া হলো:
১. এক্সটির্পেশন: ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে প্রাথমিকভাবে দাঁত পরিষ্কার করা।
ক) রুগীরা মূলত দাঁতের পাল্প সংক্রমিত হওয়ায় দাঁতে তীব্র ব্যথা বা ফোলা নিয়ে ডেন্টাল ক্লিনিকে যায়।
খ) পারকাশন, পাল্পেশন, কোল্ড টেস্ট এবং এক্স-রে’র মাধ্যমে দাঁতের রোগ নির্ণয় করা হয়।
গ) রুট ক্যানাল চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত হলে বিস্তারিত তথ্য, প্রক্রিয়া এবং খরচ সম্পর্কে জানানো হয়।
ঘ) আপনি যদি রুট ক্যানাল চিকিৎসায় রাজি হন সেক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রথম ধাপ, অর্থাৎ এক্সটির্পেশন শুরু করা হয়।
ঙ) অতঃপর দাঁত অবশ করে দাঁতের চারপাশে একটি রাবার ড্যাম ও ক্ল্যাম্প স্থাপন করা হয়। রাবার ড্যাম দাঁতকে পাটি থেকে আলাদা করে এবং লালা পড়া থেকে সূরক্ষিত রাখে। একইসাথে প্রক্রিয়া চলাকালীন আমাদের ব্যবহৃত ছোট যন্ত্রগুলো মুখের মধ্যে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও রোধ করে।
চ) রাবার ড্যাম ও ক্ল্যাম্প স্থাপনের পর এন্ডোমটোর বা টার্বাইন হ্যান্ডপিসে বার বা ফাইল লাগিয়ে দাঁত ফুটো করে রুট ক্যানেলের মুখ বের করে ক্যানাল পরিষ্কার করা হয়।
ছ) ব্যাকটেরিয়া নির্মূলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল দ্রবণ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা হয়।
জ) দাঁতের ভিতরে ওষুধ রেখে দ্বিতীয় ধাপ, অর্থাৎ ইন্সট্রুমেন্টেশন শুরু হওয়া পর্যন্ত দাঁতের উপর একটি অস্থায়ী ফিলিং রাখা হয়।
ঝ) কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ সম্পন্ন হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ফুলে যাওয়া ও ব্যথা অনুভূত হতে পারে, যা সাধারণত ২৪ ঘন্টা পর কমে যায়।
২. ইন্সট্রুমেন্টেশন: যথাযথ পরিষ্কার ও ওষুধ প্রদান
ক) সাধারণত প্রথম ধাপের ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে পর রুগী আসেন। কিছু ক্ষেত্রে একই অ্যাপয়েন্টমেন্টে রুট ক্যানাল চিকিৎসার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ সম্পন্ন করা হয় এবং সেক্ষেত্রে রুগীকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়।
খ) দ্বিতীয় ধাপ, অর্থাৎ ইন্সট্রুমেন্টেশন মূলত প্রথম ধাপের মতো হলেও রুট ক্যানাল পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে আরও ভালোভাবে কাজ করা হয় যাকে ড্রেসিং বলা হয়, যাতে রুট ক্যানালের ভিতরে অবশিষ্ট সকল ব্যাকটেরিয়া ও ইনফেকশন দূর করা যায়। ক্যানালের মধ্যে সামান্য পরিমাণ পাল্প টিস্যু থেকে গেলে রুট ক্যানাল দাঁতে ব্যথা হতে পারে।
গ) রুট ক্যানালের দৈর্ঘ্যে প্রস্থের পরিমাপও নেওয়া হয় এবং সেটি নিশ্চিত করতে এপেক্স লোকেটর ব্যবহার করা হয়।
৩. অবচ্যুরেশন: রুট ক্যা্নাল ফিলিং
ক) প্রথম ধাপের ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেব্যাকটেরিয়া ও ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে গেলে (দাঁত ব্যথা বা অস্বস্তিবোধের লক্ষণ বা উপসর্গমুক্ত হলে) মূল ফিলিং সম্পন্ন করা হয়।
খ) দাঁতের উপর রাবার ড্যাম ও ক্ল্যাম্প রেখে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল দ্রবণ দিয়ে ক্যানাল পরিস্কার করা হয়। অতঃপর ক্যানাল শুকিয়ে ক্যানালের মধ্যে ‘গাটা পার্চা পয়েন্ট’ (রাবার পয়েন্ট যা কৃত্তিম পাল্প হিসাবে ব্যবহার করা হ্য) এবং সিলারের মাধ্যমে ক্যানালের দৈর্ঘ্য প্রস্থ মিলিয়ে সিল করা হয়। তারপর গাটা পার্চা কাটার গিয়ে গাটা পার্চা পয়েন্টগুলি পুড়িয়ে সিল শেষ করা হয়।
গ) গাটা পার্চা লাগানো পরবর্তী পদক্ষেপগুলোর উপর ভিত্তি করে দাঁতে অস্থায়ী বা স্থায়ী ফিলিং সম্পন্ন করা হয়।
গ) অতিরিক্ত ভাঙ্গা দাঁতে পোস্ট বা পিন বসিয়ে কোর বিল্ড আপ করে দাঁতের পুরা গঠন তৈরি করা হয়।
পরবর্তী পদক্ষেপ কি? কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে কি? রুট ক্যানেল চিকিৎসার পর দাঁতের কি হয়?
# এক্ষেত্রে কি স্থায়ীভাবে ফিলিং এবং/অথবা দাঁতে ক্রাউন পরানো প্রয়োজন? কোন পোস্ট প্রয়োজন? কিছু ক্ষেত্রে ফিলিংয়ে ধারণক্ষমতা বৃদ্ধিতে একটি পোস্ট ব্যবহার করা হয়। এটি তখনই হয় যখন মূল গর্ত গভীর থাকে এবং দাঁতের কোন অবশিষ্ট অংশ থাকেনা। পোস্টটি রুটের ভিতরে স্থাপন করা হয় এবং ফিলিং দিয়ে কোর বিল্ড আপ করে দাঁতের গঠন দিয়ে স্থায়ীভাবে ধরে রাখতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে ক্রাউনও বসানো যেতে পারে।
# এখানে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কোন ভয় নেই। অনেকেই মনে করেন যে রুট ক্যানাল চিকিৎসা করা উচিত নয় কারণ এর ফলে মুখের ভিতরে ইনফেকশন ছড়াতে পারে। কিন্তু ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। রুট ক্যানাল চিকিৎসার কোন ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার রয়েছে এমন কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
# এটি জানা জরুরি যে, রুট ক্যানাল চিকিৎসার পর দাঁতের মধ্যে নার্ভ না থাকায় সে স্থানে কোন অনুভূতি বা সংবেদনশীলতা থাকবে না। তাই সেই অবস্থায় দাঁতের উপর কামড় দিলে একটু অদ্ভুত কিন্তু মজার অনুভূতি হতে পারে। রুট ক্যানাল মানে দাঁত মরে যাওয়া। সেই ক্ষেত্রে দাঁতে টক ঝাল মিষ্টি অনুভূতি থাকবে না কিন্তু গরম ঠান্ডা অনুভূতি থাকবে।
# এসময় দাঁতে ভিন্নরকম এক অনুভূতি হবে। অদ্ভুত হলেও, অনেকে এটিকে অবশ হাত-পায়ের মতো বলে ব্যাখ্যা করেছেন। অর্থাৎ ওই অঙ্গটি অনুভব করা যায় তবে নিস্তেজ অবস্থায় থাকে।
ক্রাউন ব্যবহার কেমন হবে? ডেন্টিস্ট রুট ক্যানাল চিকিৎসার পর দাঁতের উপর ক্রাউন রাখার পরামর্শ দেন কেন?
# দাঁতের অবস্থার উপর ভিত্তি করে ডেন্টিস্টরা দাঁতের দীর্ঘমেয়াদী ও সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রুট ক্যানাল ৩ মাসের মধ্যে দাঁতের উপরে একটি ক্রাউন রাখার পরামর্শ দিতে পারে।
# এর মূল কারণ হলো, দাঁতের নার্ভে ইনফেকশন এবং রুট ক্যানাল চিকিৎসা হলে সেটি ব্যথামুক্ত হবে কিন্তু দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। খাবার চিবানোর সময় সাধারণত পিছনের মোলার দাঁতে প্রচুর কামড় পড়ে এবং রুট ক্যানাল করা দাঁত ভেঙ্গে যাওয়ার চান্স থাকে। তাই দাঁতের উপর একটি ক্রাউন বসানো হয়, যা দাঁতে প্রয়োজনীয় শক্তি যোগায় ও মজবুত করে।
# রুট ক্যানাল করা দাঁতে ক্রাউন বসালে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। প্র্যাট-এর (২০১৬) একটি গবেষণা দরুন বলা হয়, ‘এন্ডোডোনটিক্যালি চিকিৎসা করা দাঁতগুলোয় রেস্টোরেশন বা ফিলিং (এমালগাম বা কম্পোজিট) দিয়ে বিল্ড-আপ রিস্টোর হয়। ফলে দাঁতে ক্রাউন বসানো দাঁতের তুলনায় এন্ডোডোনটিক্যালি চিকিৎসা করা দাঁত বা ফিলিং ভেঙ্গে যাওয়ার ঝুঁকি ২.২৯ গুণ বেশি থাকে।‘ সেই গবেষণায় আরও বলা হয়, ‘রুট ক্যানালের ৪ মাসের মধ্যে ক্রাউন বসানো দাঁতের তুলনায় ৪ মাস পর ক্রাউন বসানো দাঁত ভেঙ্গে যাওয়ার ঝুঁকি ৩ গুণ বেশি।‘
আপনি কি আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য সেরা ডেন্টিস্ট খুঁজছেন?
তাহলে আপনাকে প্রাভা হেলথ এ স্বাগতম!
বিভিন্ন কারণে দাঁতে বাসা বাধে জীবাণু, হতে পারে দাঁত ব্যথা, মাড়ি ফুলে যাওয়া, পোকা; এছাড়া জমে থাকা খাদ্যকণা থেকে হতে পারে প্লাক, যা থেকে হতে পারে দাঁত ক্ষয়। তাই ডেন্টিস্টরা দাঁতের সুরক্ষায় বছরে অন্তত ২ বার ডেন্টাল চেকআপের পরামর্শ দেন। আপনার দাঁতের যেকোনো চিকিৎসায়, আমাদের আছে:
১. স্মাইল প্যাকেজ
২. আমাদের আছে অভিজ্ঞ ২ জন ডাক্তার ও আধুনিক সব যন্ত্রপাতি
ডা. লুবনা শারমিন
বিডিএস (ডিডিসি), পিজিটি (ডিডিসি)
কন্সাল্ট্যান্ট, ডেন্টিস্ট্রি, প্রাভা হেলথ
অভিজ্ঞতা: ২৭ বছর
ডা. নাফিস উদ্দিন চৌধুরী
বিডিএস (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), পিএইচডি (টোকিও, জাপান)
কনসালটেন্ট, ডেন্টিস্ট্রি, প্রাভা হেলথ
অভিজ্ঞতা: ২২ বছর
No comment yet, add your voice below!